Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

লবণাক্ত এলাকায় ভুট্টা চাষ : ডিবলিং ও চারা রোপণ প্রযুক্তি

কৃষিবিদ শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস১ কৃষিবিদ অমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস২

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ জমি বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততায় আক্রান্ত । এই লবণাক্ত এলাকা বর্ষাকালে শুধুমাত্র আমন ধানের উৎপাদন ছাড়া সারা বছর পতিত থাকে, কারণ এলাকায় জমিতে জোঁ আসে ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে, ফলে সেখানে বোরো ধান চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না এবং শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির স্বল্পতার জন্য চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না। এই পতিত জমিতে বিনা চাষে ডিবলিং এবং চারা রোপণ পদ্ধতিতে ভুট্টা চাষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ফসলের  নিবিড়তা ব্যাপকভাবে  বৃদ্ধি করা সম্ভব। ডিবলিং পদ্ধতিতে নভেম্বর মাসে জমির অপেক্ষাকৃত উঁচু অংশে জমির উপরিভাগ হতে পানি সরে  যাওয়ার পর বিনা চাষে নাড়ার মধ্যে বা নাড়া কেটে নির্দিষ্ট দূরত্বে বীজ পুঁতে দেয়া হয় এবং রোপণ পদ্ধতিতে অন্যত্র  বীজতলায় চারা তৈরি করে নিয়ে  ২০-২৫ দিন বয়সের চারা অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে রোপণ করে দেয়া হয়।


লবণাক্ততা দক্ষিণ বঙ্গের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা, লবণাক্ততা শস্য উৎপাদনের প্রতিক‚ল পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং  এর ফলে সারা বছর গুটি কয়েক ফসল উৎপাদন করা হয়। বিশেষ করে রবি মৌসুমে কৃষি জমি পতিত থাকে লবণাক্ততার জন্য। শুষ্ক মৌসুমে যদি ভুট্টা চাষ করা যায় তবে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং আমাদের কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে। ভুট্টা একটি অধিক ফলনশীল দানাশস্য। ভুট্টা  Gramineae  গোত্রের ফসল যার বৈজ্ঞানিক নাম তবধ সধুং. ভুট্টার আদি নিবাস মেক্সিকো। ভুট্টার ফল মঞ্জরিকে মোচা বলে। মোচার ভেতরে দানা সৃষ্টি হয়। এই দানা ক্যারিওপসিস জাতীয় ফল, এতে ফলত্বক ও বীজত্বক একসাথে মিশে থাকে তাই ফল ও বীজ আলাদা করে চেনা যায় না। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমাণ বেশি। ভুট্টার বাজারমূল্যও অনেক বেশি। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভুট্টা একটি সম্ভাবনাময় ফসল বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে যেখানে লবণাক্ততার জন্য চাষিরা ধান ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।


ডিবলিং ও রোপণ পদ্ধতির গুরুত্ব
ডিবলিং/ চারা রোপণ পদ্ধতি এর প্রধান সুবিধা এটি মাটির ক্ষয় কমাতে সাহায্য করে। এ পদ্ধতিতে সুবিধা হলো সাধারণভাবে চাষ দিয়ে জমি তৈরি করে ভুট্টা চাষের অন্তত ১-১/২ মাস আগেই জমিতে বীজ বপন/রোপণ করা সম্ভব হয়, যার ফলে জমিতে লবণাক্ততা বাড়ার এবং ঝড় বৃষ্টি আসার আগেই ফসল তুলে নেয়া সম্ভব হয়। এ পদ্ধতিতে  চাষাবাদের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমের পতিত জমিতে অতিরিক্ত একটি ফসল চাষ করে দেশে ভুট্টার আবাদ বাড়ানো  তথা ফসলের নিবিড়তা বাড়ানোর উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তুলনামূলক কম বীজ প্রয়োজন এবং দ্রুত অঙ্কুরোদগমে সাহায্য করে। সঠিক ও একই রকম দূরত্ব বজায় রেখে রোপণ করলে প্রত্যাশিত পরিমাণে ভুট্টার ফলন পাওয়া সম্ভব। কালবৈশাখীর প্রভাব থেকে ফসলকে রক্ষা করে ঘরে তোলার জন্য ডিবলিং/রোপণ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ডিবলি এবং চারা রোপণ পদ্ধতির মাধ্যমে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার আগে ফসল পাওয়া সম্ভব ।


অর্থনৈতিক অবদান
ভুট্টা একমাত্র উচ্চ উৎপাদনশীল ফসল যার বহুমুখী ব্যবহার আছে। বর্তমানে ভুট্টা উৎপাদন ধান থেকে অনেক বেশি লাভজনক। তুলনামূলক কম খরচে ভুট্টা থেকে আয় বেশি করা যায় যা কৃষকবান্ধব। ভুট্টা গো-খাদ্য, মাছের খাদ্য, পোলট্রি ফিড এবং সর্বোপরি মানুষের খাবার হিসেবে সর্বত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।


উপযোগী পরিবেশ : ভুট্টার আদি নিবাস মেক্সিকো হলেও এটি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মে, ভুট্টা মূলত ২১ ডিগ্রি-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালো হয়ে থাকে যদিও ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। ভুট্টা চাষের জন্য ৫০ মিলিমিটার থেকে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন।
জীবনকাল ১৩০ থেকে ১৫০ দিন হয়ে থাকে।

 

মাটি : বেলে-দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। তবে এঁটেল দো-আঁশ ও এঁটেল মাটিতেও ভুট্টা চাষ করা সম্ভব। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমিতে পানি জমে না থাকে। যে মাটিতে অধিক সময় ‘জোঁ’ রাখা সম্ভব সেখানে ভুট্টা চাষ তুলনামূলক ভালো হয়।


বীজ বপনের সময়
বাংলাদেশে দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় মধ্য কার্তিক-মধ্য মাঘ (নভেম্বর-জানুয়ারি) পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। বীজ ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে জমিতে বপন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। শুভ্রা, বর্ণালী ও মোহর জাতের ভুট্টার জন্য হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ কেজি, হাইব্রিড ভুট্টার বীজ হেক্টরপ্রতি ২০-২২ কেজি এবং খইভুট্টা জাতের জন্য ১৫-২০ কেজি হারে ভুট্টার বীজ বুনতে হয়। বীজ সারিতে বুনতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৬০ সেমি.। সারিতে ২৫ সেমি. দূরত্বে ১টি অথবা ৫০ সেমি. দূরত্বে ২টি গাছ রাখতে হবে।

 

সারের পরিমাণ ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি : সংশ্লিষ্ট জমির মাটি পরীক্ষা করে মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে সারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক হাইব্রিড ভুট্টা চাষে বিভিন্ন প্রকার সারের

সারের নাম পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া ৪০০-৫০০ কেজি
ডিএপি ২৪০-২৬০ কেজি
এমওপি ১৮০-২২০ কেজি
জিপসাম ২৪০-২৬০ কেজি
জিংক সালফেট ১০-১৫ কেজি
বরিক এসিড (প্রয়োজন বোধে) ৫-৭ কেজি
গোবর ৪-৬ টন

নির্ধারিত সাধারণ মাত্রা সারণি-১ দেওয়া হলো।
ডিবলিং/চারা রোপণের ২-৩ দিন পূর্বে নির্ধারিত ইউরিয়ার এক তৃতীয়াংশ, টিএসপি এর অর্ধাংশ এবং অন্যান্য সারের সবটুকু জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সারের এক-তৃতীয়াংশ ডিবলিং-এর ক্ষেত্রে ৩০ দিন পর এবং চারা রোপণের ক্ষেত্রে ১৫ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সারের অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ এবং ফসফরাসের অর্ধাংশ ডিবলিংয়ের ৩০ দিন এবং চারা রোপণের ১৫ দিন পর হতে ১৫ দিন পরপর ৬ কিস্তিতে ডিএপি সার গুলিয়ে গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে।
পরবর্তী পরিচর্যা
উচ্চফলনশীল জাতের ভুট্টার আশানুরূপ ফলন পেতে হলে রবি মৌসুমে সেচ প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। উদ্ভাবিত জাতে ২টি সেচ দেয়া যায়। প্রথম সেচ বীজ বপনের ৪০-৫০ দিনের মধ্যে এবং দ্বিতীয় সেচ বীজ বপনের ৭০-৮০ দিনের মধ্যে।
গাছের বয়স এক মাস না হওয়া পর্যন্ত জমি অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে। ডিবলিংয়ের পর চারা গজানোর ৩০ দিনের মধ্যে  এবং চারা রোপণের ১৫ দিন পর জমি থেকে অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে। চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হলে দুই সারির মাঝের মাটি কুপিয়ে ভুট্টা গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে।
রোগবালাই দমন
সুস্থ, সবল ও ক্ষতমুক্ত বীজ এবং ভুট্টার বীজ পচা রোগ প্রতিরোধি জাত ব্যবহার করতে হবে। থিরাম বা ভিটাভেক্স (০.২৫%) প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করলে ভুট্টার বীজ পচা রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়। ভুট্টার কাÐ পচা রোগ দমনের জন্য ছত্রাকনাশক ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
ভুট্টা সংগ্রহ
দানার জন্য ভুট্টা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোচা চকচকে খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে সংগ্রহের ক্ষেত্রে উপযুক্ত হয়। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছাড়ানো বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যাবে। ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫-৮০% পরিপক্ব হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে।
ডিবলিং পদ্ধতি ছাড়া চারা রোপণের মাধ্যমেও আমরা ভুট্টা চাষ করতে পারি। এজন্য প্রথমে বীজতলা তৈরি করে বীজ ফেলতে হবে এবং নির্দিষ্ট বয়সি চারা নিয়ে জমিতে রোপণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে  ১৫ দিন, ২০ দিন অথবা ২৫ দিন বয়সি চারা রোপণ করা যায়। চারা রোপণের মাধ্যমে ভুট্টা চাষ করলে নানামুখী সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার আগেই কাক্সিক্ষত ফসল উত্তোলন সম্ভব।

১প্রকল্প পরিচালক, পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, এসআরডিআই, খুলনা, মোবাইল : ০১৭১৮-৬৯১৬৬৬,  
 ই-মেইল :sachinb_srdi@yahoo.com, ২ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্র, বটিয়াঘাটা, খুলনা


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon